সোহেল হোসেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি// লক্ষ্মীপুরে উপকূলীয় জেলা এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে এই জেলার পরিচিতি থাকলেও দেখা মেলেনি তেমন উন্নয়ন। দুর্নীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এখানকার নেতারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতেই একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে এই জেলায়।
তবে ২০১৭ইং সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুরে পা রাখতেই পিছিয়ে পড়া এই জেলা এগোতে থাকে সামনের দিকে। চার বছরের অবিশ্বাস্য উন্নয়নে বদলে যায় ১৪৫৬ বর্গ কিলোমিটারের এই জেলা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত সচেতন ১২ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে প্রতিযোগিতা দিয়ে পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা উন্নয়নের প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছে না। এর সুফলও তারা ঘরে তুলতে অনেকটা ব্যর্থ হচ্ছে। তারা দলের ভােট বেড়েছে দাবি করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আওয়ামী লীগের ভোট বাড়েনি।
মেঘনা-ডাকাতিয়া আর রহমতখালী নদীঘেঁষা লক্ষ্মীপুর জেলা কয়েক বছর আগেও পিছিয়ে ছিল। পরিচিত ছিল সন্ত্রাস আর অশান্তির জনপদ হিসেবে। এখন সেই জেলা পরিণত হয়েছে শান্তির ও উন্নয়নের জনপদে। শুধু জেলা-শহরই নয়, গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের মাপকাঠিতে গত চার বছরসহ এক যুগে অনন্য সাফল্য বয়ে এনেছে।
আর এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ইং সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর সফরে এসে ২৭টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর মধ্যে রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), ২০২১ইং সালের পয়লা জুন জাতীয় একনেকের সভায় কমলনগর-রামগতিতে বড়খেরি লধুয়া বাজার, কাঁদিরপণ্ডিতের হাট ৩১ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ ভবন, সদর উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়াম, কমলনগর উপজেলা পরিষদ ভবন, কমলনগর উপজেলা অডিটরিয়াম, লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়), কমলনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর ও প্রাণী হাসপাতাল উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন।
এই ছাড়া গ্রাম পর্যায়ে পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে উদ্বোধন করা হয়েছে দাশেরহাট পুলিশ ফাঁড়ি ও চন্দ্রগঞ্জ থানা। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নৌ-বন্দর ও রেললাইন প্রকল্প।
জানা গেছে, এই সরকারের আমলে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী বিদ্যুৎখাতে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। নির্মাণ হয়েছে পৌর শিশু পার্ক। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে জেলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে। এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষের দিকে।
নদীভাঙন রোধে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ, প্রবাসীদের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে পাসপোর্ট অফিস। উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরে শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলমান রয়েছে। খুলে দেওয়া হলো লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ পাঁচতলা ভবন, দত্তপাড়া কলেজ, জনতা কলেজের নবনির্মিত ভবনসহ চার শতাধিক স্কুল-মাদরাসার নতুন ভবন।
এই ছাড়া দুই উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, চারটি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ১৫টি গ্রামীণ হাট-বাজার গ্লোথ সেন্টার, ৭০টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র, দুটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ২৫টি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ, ২৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, চারটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ ও ২২৯টি সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম পাটোয়ারী।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুরাদ হোসেন বলেন, গত ১২ বছরে ১২৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিন ও চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৭টি বেসরকারি মাদরাসায় একতলা ও চারতলা, ৩৭টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজ এবং টেকনিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ১০০টি সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসায় নতুন ভবন, ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এসব কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪০ টাকা।
লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী লাবণ্য বড়ুয়া বলেন, ২০২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলায় ২১টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত তলার চিপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা সদর হাসপাতাল ভবন, ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কোস্টগার্ড ভবনসহ ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন ও নাবিক নিবাস-কোস্টগার্ড মজুচৌধুরীর হাট, পুলিশ অফিসার্স মেস, লক্ষ্মীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন খাদ্যগুদাম, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র, পিয়ারাপুর সেতু, চেউয়াখালী সেতু স্থাপন ও কাজ চলমান রয়েছে। একইভাবে চলমান রয়েছে ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নূরনবী জানান, গত ১২ বছরে ১০ হাজার গভীর নলকূপ স্থাপন, পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ৯টি পুকুর খনন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫৮৬টি ওয়াশ ব্লক ও ৩৭৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। হতদরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে ৩৮১৫ সেট ল্যাট্রিন, ৪২২৮ সেট স্বল্পমূল্যে রিং ও স্লাব বিতরণ, ১৪টি পাবলিক টয়লেট, ১৬টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন, ৫৩.৬৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন, ১৩টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন, একটি উচ্চ জলাধার নির্মাণকাজ করা হয়েছে। এছাড়া পানি শোধনাগারের নির্মাণকাজ চলমান রয়ে
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।