প্রনয় দাস, অভয়নগর প্রতিনিধি // যশোরের অভয়নগর উপজেলার ঐতিহাসিক একাদশ শিবমন্দিরে গতকাল বুধবার (১৩ এপ্রিল) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চড়ক পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ পূজা এই চড়ক পূজা। বাংলা চৈত্র মাস যাওয়ার আগের দিন একাদশ শিবমন্দিরে এই চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব চড়ক পূজা। চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী এ পূজার উৎসব চলে।
জানা যায়,প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয়। জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন।
গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের। চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয়। এ পূজার বিশেষ অঙ্গের নাম নীলপূজা। পূজার আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়। এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুরমথিত লম্বা কাঠের তক্তা (‘শিবের পাটা’) রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পূজা করা।
মুলত পূজার উদ্যোক্তারা কয়েকজনের একটি দল নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। দলে থাকে একজন শিব ও দুজন সখী। একজনকে সাজানো হয় লম্বা লেজ দিয়ে, তার মাথায় থাকে উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল। সখীদের পায়ে থাকে ঘুঙুর। তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল। সখীরা গান ও বাজনার তালে তালে নাচে। এদেরকে দেল বা নীল পাগলের দলও বলা হয়। এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাজনের গান গায় এবং নাচ-গান পরিবেশন করে। বিনিময়ে দান হিসেবে যা কিছু পাওয়া যায় তা দিয়ে হয় পূজা।
এই পূজায় এখানকার ও বাইরে থেকে হাজার হাজার মা-বোনেরা আসেন সারাদিন নির্জলা উপোস থেকে।তারা নিজেদের মনোবাসনা পূর্ণ করতে শিবের মাথায় জল ঢালে।এই দিনে এখানে দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের সমাগম হয়।
Leave a Reply