বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি // একাত্তরের ২০ মে খুলনার চুকনগরে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের মুখে পড়ে গিয়েছিল নবপরিনিতা বধু বিলাসী ও তার পরিবার ।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা শুরুতে পুরুষদের উপরে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করছিলো। বিলাসী তার স্বামীকে বাঁচাতে লুকিয়ে ফেলেন ঝোপের আড়ালে।তবে অনেক চেষ্টা করেও তিনি স্বামীকে লুকিয়ে রাখতে পারেননি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ছোবোল থেকে।
একসময় স্বামীর হাতে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান বিলাসী।লোকের ভিড়ে হারিয়ে ফেলেন তার প্রানপ্রিয় স্বামীকে।একজন লোক এসে বলতে থাকেন,তোমরা কোথাও যেও না,তোমরা এখানেই থাকো,তোমাদের কিছু হবে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ৬ জন উঁচু লম্বা পাকিস্তানি আর্মি সেখানে এসে হাজির হয় হাতে ছিল ভারী অস্ত্র এবং গোলাবারুদ। তারা নিরীহ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং নিমেষেই এই ৬ জন মানুষ হাজারো মানুষকে মাটিতে লুটিয়ে দেয়।
হাজার হাজার মানুষের রক্ত আর লাশের পাহাড়ে পরিণত হয় পুরো চুকনগর এলাকা। বিলাসী সবখানে তার স্বামীকে খুঁজতে থাকে। অবশেষে তিনি তার স্বামীর রক্তাক্ত শরীর দেখতে পান। তার সামনে থাকা চার ফুট উঁচু তার-কাঁটার বেড়া,তার ওপর দিয়ে তিনি লাফিয়ে পড়েন স্বামীর মৃতদেহের কাছে।তার শরীরের অনেক অংশই ক্ষতবিক্ষত হয় কাঁটাতারের আঘাতে। তার স্বামীর রক্তাক্ত শরীর দেখে তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেন নি।
তাদের সকল অর্থ-সম্পত্তি টাকা-পয়সা গহনা সবই ছিল তার স্বামীর কাছে।তো কি করবেন আর এসব দিয়ে। তাই স্বামীর লাশের সাথে এই সব রেখে নিজ গ্রাম আউস খালিতে ফিরে যান।
স্বামীকে এভাবে হারিয়ে নরম কোমল মেয়েটি হয়ে যান ইস্পাত পাথরের মত। স্বামী হারানোর বেদনা এবং শোকে জর্জরিত হয়ে বসে থাকেননি তিনি, দেশকে শত্রু মুক্ত করতে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেন বিলাসী। যারা জীবন বাজি রেখে শত্রু মুক্ত করতে চেয়েছিলো আপন মাতৃভূমিকে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।
কখনো রান্না করে খাইয়েছেন কখনো বা মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে নিজেই জীবনকে বাজি রেখে সাহস ও শক্তি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো,শুরু হলো স্বামীহারা বিলাসীর জীবন যুদ্ধ। দেশ স্বাধীন করেছেন কিন্তু স্বামীহারা এই বিলাসী আপন মাতৃভূমি ছাড়া আর পাননি কিছুই, আজ তার দুই চোখ অন্ধ, বাংলার পথে পথে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। হয়তো আমাদের সমাজে তাদের কোন মূল্য নেই, অথচ বিলাসীদের মতো বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগই আমাদের দিয়েছে নতুন এক দেশের মানচিত্র।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুব জামান সারের নেতৃত্বে কাজ করছে একটি প্রতিষ্ঠান “আমরা একাত্তর”। একটি সফটওয়্যার কোম্পানি Softmat এর কর্মকর্তা শিমুল কান্তি বালার নেতৃত্বে তৃনমুল থেকে তুলে আনা বিলাসীর গল্পের প্রতক্ষদর্শী ছিলাম চুকনগরের বধ্যভূমিতে । বটিয়াঘাটার আউশখালী গ্রামে গিয়ে প্রতক্ষভাবে পর্যবেক্ষন করে মর্মহত হৃদয়ে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও বিলাসীর ইতিহাস পড়ে থাকলো নিভৃতে নিরালায় ।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।