পরেশ দেবনাথ,কেশবপুর,যশোর // যশোর জেলাধীন কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের সন্যাসগাছা গ্রামের কৃতি সন্তান কেশবপুরের গর্ব বিশিষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবিদ হোসেন মোল্লার কন্যা ডাক্তার নাবিলা তাবাসসুম শিশু স্বাস্থ্যের ওপর কৃতিত্ব অর্জন করায় গতকাল শনিবার (৬ আগষ্ট) উপজেলার ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জনের পর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের লক্ষে আগামী ২৮ আগষ্ট লন্ডনে গমন করবেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লার পরম স্নেহের ভাইজি ডাক্তার নাবিলা তাবাসসুম শিশু স্বাস্থ্যের ওপর কৃতিত্বের সাথে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করার পর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য লন্ডনে গমনের আগ মুহূর্তে পৈতৃক ভিটায় সবার নিকট দোয়া নিতে আসে।তারই ধারাবাহিকতায় আজ ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে দোয়া নিতে আসে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাবিলা তাবাসসুমের গর্বিত পিতা, মাতা ও চাচি মাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান হয়।
ডাক্তার নাবিলা তাবাসসুম ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কৃত্বিতের সাথে এস,এস,সি পাশ করেন।বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডাক্তার নাবিলা তাবাসসুমকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
উপজেলার ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লার পরিচালনায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন,ঢাকা বার্ডেম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান কেশবপুরের গর্ব প্রফেসর ডাঃ মোঃ আবিদ হোসেন মোল্লা।
অধ্যাপক আবিদ হোসেন বলেন,তার জন্মস্থান কেশবপুরের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। দেশের স্বার্থে ও কেশবপুরের স্বার্থে আমি যেমন যতটুকু সম্ভব সব ধরণের সহযোগিতা করার চেষ্ঠা করে চলেছি, আমার মেয়ে ডাক্তার নাবিলা তাবাসসুমও সেইভাব জনসেবা করে যাবে বলে বিশ্বাস করি। আপনারা তার মঙ্গলের জন্য দোয়া/আশির্বাদ করবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, গৌরিঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান হাবিব, ডাঃ আবিদ হোসেন মোল্লার স্ত্রী সৈয়দা আমেনা মেহের , ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব মোল্লার স্ত্রী জেলী বেগম। আরো বক্তব্য রাখেন, প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ মুস্তাফিজুর রহমান কাজল, ইউপি সদস্য আফজাল হোসেন, মোঃ হাসেম আলী। পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ, ছাত্র ছাএীবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আঃ হালিম শেখ।
এর পর গৌরিঘোনা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান হাবিব, পরিষদের সচিব মোকলেছুর রহমানসহ ইউপি সদস্যগণ ও গ্রাম পুলিশ সদস্যগণ তাদের অভ্যার্থনা জানান এবং সকলে মিলে স্মৃতি চিহ্ন রাখতে কয়েকটি ছবি তোলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সমাজ সেবক, ডাক্তার নাবিলা তাবাসসুমের গর্বিত পিতা ঢাকা বার্ডেম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ও কেশবপুরের গর্ব ডাঃ মোঃ আবিদ হোসেন মোল্লা সম্পর্কে কিছু কথা না বললে নয়।
প্রফেসর ডাঃ আবিদ হোসেন মোল্লার পারিবারিক পরিচিতিঃ
প্রফেসর ডাঃ আবিদ হোসেন মোল্লা ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সন্নাসগাছা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম শাহাদাত হোসেন মোল্লা এলাকায় একজন সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পেশায় তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী। মা আমেনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। জনাব আবিদ হোসেন মোল্লা পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। বড় ভাই মরহুম মোঃ আমির হোসেন মোল্লা, ছোট ভাই কেশবপুর উপজেলার ভরতভায়না মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহসান হাবিব, ছোট দুই বোন ফরিদা খাতুন ও বিবি খাদিজা গৃহিণী। ১৯৮৪ সালের ১ জুন সৈয়দা আমেনা মেহের এর সাথে তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। স্ত্রী অর্থনীতিতে এম. এ। তিনি যশোর শহরের কারবালার বাসিন্দা। ব্যক্তিগত জীবনে তাদের দুই সন্তান। ছেলে ব্যাংকার আসিফ ইকবাল ও মেয়ে ডাঃ নাবিলা তাবাসসুম।
শিক্ষাজীবন!
জনাব আবিদ হোসেন মোল্লার লোখাপড়ার হাতেখড়ি হয় কেশবপুরের সন্যাসগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চুকনগর দিব্য পল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। খুলনার বি.এল কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ১৯৮২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৯২ সালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফসিপিএস পাশ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লেমা ইন মেডিকেল এডুকেশন এর উপর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
পেশাগত জীবন:
১৯৮২ সালে তিনি মেডিকেল অফিসার হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি জীবন শুরু করেন। তারপর মেডিকেল অফিসার হিসেবে পোস্টিং নিয়ে ময়মনসিংহ এর হালুয়াঘাট এবং পরে যশোরের ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকুরী করেন। সরকারী চাকুরী ছেড়ে ১৯৮৪ সালে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি নিয়ে সেখানে গমন করেন। ১৯৮৭ সালে দেশে ফিরে এসে ৮ম বিসিএস এর মাধ্যমে পুনরায় সরকারী চাকরি গ্রহণ করেন। মেডিকেল অফিসার হিসেবে পোস্টিং হয় যশোরের চৌগাছা উপজেলায়। ১৯৯০ সালে শিক্ষা বিভাগের সহকারী রেজিস্টার হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। ১৯৯২ সালে প্রেড্রিয়েটিক্সে এফসিপিএস (FCPS) ডিগ্রী লাভ করেন। পোস্টিং সেখানেই থাকে। অতপর: ১৯৯৩ সালে সহকারী অধ্যাপক (শিশু স্বাস্থ্য) হিসেবে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। দেশে ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক এবং সর্বশেষ ২০০৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। এখন তিনি ঢাকা বার্ডেম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর হিসাবে কর্মরত আছেন।