আল-হুদা মালী,শ্যামনগর // সাতক্ষীরা,শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় রয়েছে ১২২নং খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষক সংকটসহ প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন লিটনের চরম উদাসীনতা বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,১০টা ২৪ মিনিটে গাবুরা খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ছাত্র-ছাত্রীরা ছোটাছুটি করছে। এবং বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণী কক্ষে পাঠদান করছেন দুই জন প্যারা শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষক দিয়ে।
হাজিরা খাতায় অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী আছেন ৬০ জন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ১৪ জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ৬৮ জনের স্থলে ১৯ জন এবং তৃতীয় শ্রেণীতে ৮০ জনের স্থলে ২৭ জন উপস্থিত রয়েছে।প্যারা শিক্ষকরা হলেন, স্থানীয় বাবু খান, শাহাদাত হোসেন ও কুমকুম আক্তার নামে তিন কলেজ শিক্ষার্থীকে প্যারা শিক্ষক বানিয়ে ৪৩৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদান চলছে বিদ্যালয়টিতে।
অফিস কক্ষে যেয়ে দেখা যায়,টেবিল ও চেয়ারে ধুলার আস্তরণ পড়েছে এবং মাকড়সা জাল বুনেছে চোখে মেলে। দেখলে মনে হবে মাসের পর মাস বন্ধ থাকে অফিস কক্ষটি।
বিদ্যালয়ে খাতা কলমে চারজন শিক্ষক থাকলেও সহকারী শিক্ষক মিরা বালা বর্তমানে তিনি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। ফরহাদ হোসেন মোল্লা সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন থাকেন শ্যামনগরে। আর অপর সহকারী শিক্ষক বুদ্ধদেব জোয়ার্দার বিদ্যালয়ে আসেন অনিয়মিত।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের আগে বাড়ী ছিল গাবুরায় বর্তমানে তিনি উপজেলায় বাড়ী করে থাকেন শ্যামনগরে। মাসে এক-দুইদিন স্কুলে আসেন তিনি। বাকি সময় অফিসে কাজ আছে বলে আসেন না প্রধান শিক্ষক। তিনি টানা ১৮ বছর বিদ্যালয়টিতে কর্মরত আছেন।
বিদ্যালয়ে গেলে সহকারী শিক্ষক বুদ্ধদেব জোয়ার্দার প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত থাকেন বলে দাবি করলেও হাজিরা খাতা দেখাতে বললে সাদাসিধা ভাষায় জানান, হাজিরা খাতা আলমারিতে। আর চাবি হেড স্যারের কাছে, স্যার যখন আসে তখন স্বাক্ষর করি। এসময় প্রধান শিক্ষক শেষ কবে বিদ্যালয়ে এসেছেন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি হাফেজ মাহমুদুল হাসান জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় জমিদান থেকে শুরু করে ম্যানেজিং কমিটিতে থেকে কাজ করেছি। বিগত কয়েকবছর যাবৎ বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে হতাশ হচ্ছি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন ম্যানেজিং কমিটি নেই, শিক্ষকও নেই।
বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখার সময় শিক্ষার্থীদের সাথে গল্পের ছলে আড্ডা দেওয়ার সময়
শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে, হেড স্যার শ্যামনগরে থাকেন। ফাঁকে ফাঁকে আসেন, আবার চলে যান।
অভিভাবক আবুল কালাম ও মরিয়ম বেগম জানান, স্কুলে বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটি নেই। শিক্ষক সংকট রয়েছে। অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের কোন সম্পর্ক নেই। হেড স্যার আসেন না। থাকেন শ্যামনগরে। তিন জন প্যারা শিক্ষক দিয়ে নিজের কাজ সারেন।
গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার খান হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে দেলোয়ার হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তার খামখেয়ালীপনায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এখনো ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কয়েকবার বসাবসী হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয়নি। তিনি নিজে স্কুল করের না। আর বিদ্যালয়ে শিক্ষক রাখার বদলে নিজের স্বার্থের জন্য শিক্ষকদের বদলিতে সুপারিশ করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে (০১৯১৩৪০১৭৮২) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিজ মিঞা জানান, প্রধান শিক্ষক নিজে স্কুল না করে বেতনের টাকায় তিনজন প্যারা শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানোর বিষয়ে সত্যতা পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্যারা শিক্ষকদের টাকা দিয়ে রাখা যাবে, তবে এলাকাবাসী বা ম্যানেজিং কমিটি বিষয়টি দেখবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।