খুলনার খবর || ফিতরা আরবি শব্দ,যা ইসলামে জাকাতুল ফিতর (ফিতরের জাকাত) বা সাদাকাতুল ফিতর (ফিতরের সদকা) নামে পরিচিত।
জাকাতুল ফিতর বলা হয় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব দুঃস্থদের মাঝে রোজাদারদের বিতরণ করা দানকে।ফিতরা আদায় করা ইসলামি বিধান মতে ওয়াজিব। হাদিস শরিফে সদকাতুল ফিতরকে কাফফারাতুন লিসসাওম, অর্থাৎ রোজা অবস্থায় অবচেতনভাবে যে ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে যায়, তার কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিটি সামর্থবান মানুষের ওপর ফিতরা ওয়াজিব। যে ব্যক্তির নিকট ঈদের দিন তার ও তার পরিবারের খাদ্য-খোরাক বিদ্যমান রয়েছে এবং সেই সঙ্গে ফিতরা দেওয়ার সামর্থ্য আছে তার জন্য আল্লাহ তায়ালা ফিতরা ওয়াজিব করেছেন।
ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের নামাজ বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ ফিতরা দিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়া।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিতেন। (সহি বুখারি : ১৫০৩)।
এর ভিত্তিতে আলেমরা বলেন, সদকাতুল ফিতর রমজানের শেষ দিকেই আদায় করা উচিত। এতে করে গরীব লোকদের জন্য ঈদের সময়ের প্রয়োজন পূরণেও সহায়তা হয়। আর রমজানের শুরুতে বা পূর্বে ফিতরা আদায় করলেও অধিকাংশ ফকীহগণের মতে তা আদায় হয়ে যায়। (আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৩২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৪২)
টাকা-পয়সা দ্বারা ফিতরা না দেওয়ার চেয়ে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মুদ্রা হিসেবে দিনার এবং দিরহামের প্রচলন ছিল এবং সে কালেও ফকির ও মিসকিনদের তা প্রয়োজন হত। তা দ্বারা তারা জিনিস-পত্র ক্রয়-বিক্রয় করত। তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুদ্রা দ্বারা ফিতরা নির্ধারণ না করে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা নির্ধারণ করেছেন। হাদিস মতে, খাদ্যবস্তু দ্বারাই ফিতরা আদায় করা সুন্নাত। আর এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত।
ইবনে উমর (রা.) বলেন,রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব জাকাতুল ফিতরা হিসাবে ফরজ করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’। (বুখারি-মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৫)
তাই ফিতরা আদায় করতে হবে প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক ‘সা’ খাদ্যশস্য দিয়ে। ‘সা’ হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওজন করার পাত্র। নবী করিম (স.) এর যুগের ‘সা’ হিসাবে এক ‘সা’ তে সবচেয়ে ভালো গম দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম হয়। বিভিন্ন দ্রব্যের নিজস্ব ওজনের ভিত্তিতে ‘সা’ এর ওজন বিভিন্ন হয়। এক সা চাউল প্রায় দুই কেজি পাঁচশ গ্রাম হয়। তবে ওজন হিসাবে এক ‘সা’ গম, যব, ভুট্টা, খেজুর ইত্যাদি দুই কেজি দুইশ পঁচিশ গ্রামের কিছু এদিক সেদিক হয়ে থাকে। তাই সতর্কতা হিসেবে তিন কেজি নির্ধারণ করা ভালো।
উল্লেখ্য, কেউ ঈদের পরে ফিতরা দিলে সেটা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে এবং সে ফিতরার বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা হতে বঞ্চিত থাকবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।