কামরুজ্জামান সুমন,ঢাকা || আন্তর্জাতিক অনলাইন বিপণি অ্যামাজনের ভুয়ো সাইট তৈরি করে দেশ জুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে সাইবার জালিয়াতরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একটি নাম্বার থেকে(01841079453) হোয়াটস্ অ্যাপ মেসেজ আসতে শুরু করে।মেসেজটি হলো:
“একটি কাজের অ্যাসাইনমেন্ট শুরু করার আগে, আপনাকে একটি কাজের অ্যাকাউন্টের জন্য সাইন আপ করতে হবে যাতে আপনি আপনার বেতন পেতে পারেন”।এধরনের কথা লিখে একটি রেজিস্ট্রেশন লিঙ্ক:
https://www.amazon3s.com/index /login/
অ্যামাজনের নামে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেওয়াও হচ্ছে।
সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই সেই লিঙ্কে ক্লিক করেছেন।ক্লিক করতেই অ্যামাজন ওয়েবসাইটের মতো দেখতে একটি পাতা খুলে যাচ্ছে। আর সেই পেজ-এ চোখ রেখে চমকে গিয়েছেন সবাই।সেখানেই লোভনীয় চাকরির অফার।
ভুক্তভোগী সুমন জানান,অ্যামাজন প্রতিষ্ঠান এর বিষয়টি আমি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে বিজ্ঞাপন হিসেবে পেয়েছি। বেশ কিছু অনলাইন পেইজ এ অ্যামাজন প্রতিষ্ঠান নামে এমন অনেক টাইম জবের বিজ্ঞাপনগুলো দেয়া আছে। বিশেষ করে যারা বেকার বা পার্ট টাইম জব করতে আগ্রহী তারা এই সাইটগুলোতে নক করে।
আমিও তেমন একটি সাইটে ঢুকে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তাদের পেজের লিংক যাওয়ার পরে সেখানে একটা হোয়াটসঅ্যাপ সাইটের একাউন্টে অনলাইনে চ্যাট করে কিছু বিষয় জানতে চাই। তার সাথে যোগাযোগ হলে তিনি আমাকে বেশ কিছু ইন্সট্রাকশন দিন এবং কিছু তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলেন। আমি ও আমার কিছু তথ্য পূরণ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করি এবং সেখানে আমাকে একটি আইডি পাসওয়ার্ড দেয়া হয়।
পরবর্তীতে আমারে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আমাকে টেলিগ্রামের মাধ্যমে অ্যামাজনের একজন ম্যানেজার এর সাথে অনলাইনে ট্যাগ করা হয়। তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদেরকে কিছু প্রক্রিয়া দেখান। যেখানে পেজের মধ্যে তাদের কিছু সংখ্যা দেওয়া আছে এবং সে সংখ্যাগুলোর মধ্যে ন্যূনতম ২০০ টাকা থেকে ২০/৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ এর একটা অপশন দেয়া আছে। নির্দিষ্টসংখ্যক পরিমান রিচার্জ করলে একটা প্রোডাক্ট এর ছবি এবং তার সাথে কিছু কমিশনের অপশন দেয়া আছে। যে বা যিনি এটার অপশনে বিকাশ বা নগদ এর মাধ্যমে রিচার্জের পর একটি প্রোডাক্ট আসবে কমিশন সহ। সেই ক্ষেত্রে সেটা সম্পন্ন করার পরে ক্যাশ উত্তোলনের অপশন আসবে এবং সয়ংক্রিয় ভাবে টাকা একাউন্টে চলে যাবে।
আমি প্রথমতঃ একটি ধাপেই প্রডাক্ট সম্পন্ন করেছিলেন ফলে কিছু কমিশনের মাধ্যমে তা পাই। ২য় পর্যায়ে ৫০০ টাকার জন্য প্রোডাক্ট নিলে পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে আসে। স্বামী তিনটি ধাপ আরো কিছু রিচার্জের মাধ্যমে সম্পন্ন করি এবং আমার টাকা কমিশনসহ উত্তোলন করি।তৃতীয় বার ১,০০০/- রিচার্জ করি এবং সেখানে ৬টি ধাপ আসে। আমি একটি-দুটি করে বহু কস্টে ৫টি ধাপ কমপ্লিট করার পর আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা রিচার্জ করতে হয়। আর প্রতিবার টাকা যখন বিকাশ করি তখন আলাদা আলাদা নাম্বারে বিকাশ করতে হয়।নাম্বারগুলো হলো-(01936085917, 01949689827, 01971577834, 01971577864, 01978966925, 01916062766, 01936839431, 01903709673)।
আমি অ্যামাজন ম্যানেজারকে সেই অবস্থায় শেষ করার জন্য অনুরোধ করি,আর আমাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কিন্তু তিনি আমাকে ৬ষ্ঠ ধাপ শেষ করা ছাড়া টাকা উত্তোলনের সুযোগ নাই বলে জানান।
উল্লেখ্য ৬ষ্ঠ ধাপ শেষ করতে হবে ১,২০,০০০/- টাকার মাধ্যমে। অথচ ৫ম ধাপ শেষে আমার ব্যালেন্স ছিল ৭০,০০০/- টাকা। আমার প্রয়োজন ছিলো আরো ৫০,০০০/- হাজার টাকা। যা কোন ভাবেই জোগাড় করতে পারিনি। এ অবস্থায় আমার জন্য নিজেকে বেশ কয়েকদিন রিকোয়েস্ট করার পরও সে আমাকে লোন করে সেটা সম্পন্ন করতে বলে। আমি তাকে তার ম্যানেজমেন্টের সাথে যোগাযোগ করে কমিশন ছাড়া আমার মূল টাকা দিতে অনুরোধ করেছি। তার কোন সমাধান পাইনি। আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি এবং তা আগের অবস্থায় রয়েছে। এটা আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে আমি সন্দিহান।
এই ধরনের অ্যামাজনের মত বড় প্রতিষ্ঠানের পেইজ খুলে আমার মতো অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না তো! বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। এ সমস্ত ভুয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন আর যেসব বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেই নাম্বার গুলো যাচাই করা হলে এই চক্রকে ধরা সম্ভব হবে।তাহলে এসব প্রতারক আর কারো সর্বনাশ করতে পারবেনা।