খুলনার খবর ||এবাদত হোসেন পেশায় একজন কৃষক। খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়ায় তার বাড়ি। এক সময় তিনি ধানের চাষ করতেন। তার ভাষ্যমতে ধান চাষ করা খুবই কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। তাই ধান চাষ ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন শাকসবজি চাষ।
বাড়ির আশপাশে থাকা জমিতে ধান কাটার পর চাষ করেন রবি মৌসুমে বিভিন্ন ধরনের শাকসজি। একদিন বাজারে গিয়ে দেখেন এক লোক কলমি শাক বিক্রি করছেন। সেটা দেখে তার কাছ থেকে কলমি শাক চাষের সব কৌশল জেনে নেন। তারপর ওই কৃষকের পরামর্শ অনুযায়ী কলমি শাক চাষে উদ্বুদ্ধ হন। তিনি দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়ার মাঠে এই কলমি শাকের চাষ করেন।
তিনি যে জমিতে কলমি শাকের চাষ করেন সেখানকার মাটি প্রথমে ভালোভাবে প্রস্তুত করেন। তিনি জানান, ‘ প্রথমে ২০১৭ সালে উক্ত জমিতে ধান চাষ বাদ দিয়ে কলমি শাকের আবাদ করেছি। সেই থেকে আমি উৎপাদিত শাক বাজারে বিক্রি করে আসছি। আমি প্রায় সারা বছর এ জামি থেকে শাক কাটি এবং চিকন রশি দিয়ে আঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করি। প্রথম বছর আমি ভালো টাকা আয় করি কলমি শাক বিক্রি করে।
তারপর থেকে আমি নিয়মিত এই কলমি শাক চাষ করি। প্রায় ৫ বছর যাবৎ আমি লিজ নেওয়া উক্ত ১৫ শতক জমিতে কলমিশাক উৎপাদন করে বিক্রি করছি। কলমি শাক খুব কম সময়ের মধ্যেই বিক্রির উপযোগী হয় এবং জমির একপাশ থেকে শাক কাটা শুরু করে সম্পূর্ণ জমির শাক কাটতে কাটতে পুণরায় শাক কাটার উপযোগী হয়ে যায় ।
বৈশাখ মাসের শুরু থেকে কলমি শাক বিক্রি শুরু করে তা সারা বছর কমবেশী বিক্রি করা যায়। তবে কার্তিক মাস পর্যন্ত উৎপাদন ভালো হয়। এভাবে বছরে তিনি প্রায় সারা বছর কলমি শাক বিক্রি করতে পারেন।
প্রতিদিন তিনি জমি থেকে শাক কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে নিয়ে পাইকারী অথবা খুচরা বিক্রি করেন। খুচরা বিক্রি করলে দাম বেশী পাওয়া যায়। প্রতি মোঠা বিক্রি করেন ১০ টাকা দরে।
এভাবে তিনি প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেন। তিনি বলেন, শবজি চাষে পূজি কম লাগে এবং শ্রমও কম লাগে। কলমি শাক চাষের জন্য তিনি প্রচুর পরিমাণে গোবর সার ব্যবহার করেন। ফলে তার উৎপাদন খরচও কম হয় বলে তিনি জানান।
তার দেখাদেখি আরো অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়ে তারাও এখন কলমি শাকের চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘আগের ধানের চাষের চেয়ে এখন এই কৃষিকাজ করে অনেক ভালো আছি। ধানের চাষে অনেক কষ্ট করতে হতো এবং খরচও বেশী হতো কিন্তু এ কৃষি কাজে আমার পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করে ফলে কষ্ট কম হয়’ ।
তিনি আরো জানান, ‘কলমি শাক চাষে যা ব্যয় হয় সে তুলনায় লাভ ভালোই হয় যা দ্বারা আমি আমার সংসার ভালোভাবে চালাতে পারি এবং প্রতি মসে কিছু সঞ্চয়ও করতে পারি। আমরা সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শবজি উৎপাদন করি। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা সহায়তা পাইনা’।
দিঘলিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, এ উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে কলমি শাকের চাষ হয় এবং এ উপজেলায় সব ধরনের মোট সবজি চাষের জমিরপরিমাণ ৮১০ হেক্টর। সবজি চাষীদের কোনো সরকারি প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র ভারী চাষের উপর সরকারি প্রণোদনা সহায়তা দেওয়া হয়।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।