খুলনার খবর ||বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতীয় সরকার ঘোষণা করে অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এক বড় ধরনের সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
“মার্চ ফর ডক্টর ইউনূস” শিরোনামে এই কর্মসূচির ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভাইরাল ব্যানারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যানারটিতে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হলো এর মাঝখানে বড় করে লেখা “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” স্লোগান, এক প্রান্তে রংপুরের জুলাই আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের ছবি এবং অপর প্রান্তে ঢাকার শহীদ মীর মুখদের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে এক যুবকের ছবি এবং “আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন”, “দেশের সংস্কারকে বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসুন” এর মতো স্লোগান ব্যানারটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
এই সমাবেশের মূল দাবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জাতীয় সরকার হিসেবে ঘোষণা করা এবং ড. ইউনূসকে অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেওয়া। সমাবেশ আয়োজকরা জোর দিয়ে বলছেন, দেশে আগে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন, তারপরই নির্বাচনের কথা ভাবা উচিত। তারা আরও দাবি করছেন, অন্তর্বর্তী সরকার থেকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী দোষীদের অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ড. ইউনুসের পদত্যাগের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় জনগণের মধ্যে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকেই এই সমাবেশের প্রেরণা বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ এবং বর্তমান সরকারি ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এই সমাবেশের পেছনে কাজ করছে।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে সমাবেশের পূর্বে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী বা পুলিশি প্রস্তুতি দেখা যায়নি। তবে জুলাই মঞ্চ নামক একটি সংগঠন সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের আয়োজন করেছে। যদিও সমাবেশের ব্যানার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, কিন্তু কারা এই আয়োজনের পেছনে রয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও এখনো দৃশ্যমান নয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে এই সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকার গঠনের সময় ড. ইউনূস প্রথমে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও পরে ছাত্রদের অনুরোধে রাজি হন।
ড. ইউনূসের প্রতি এই ব্যাপক জনসমর্থনের পেছনে তার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সুনাম, সামাজিক সংস্কারকের ভাবমূর্তি, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং গত নয় মাসে তার সরকারের কর্মকাণ্ড প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এই সমাবেশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এটি দেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন যে তারা একজন দক্ষ, সৎ ও জনকল্যাণমুখী নেতার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়।
এই সমাবেশ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে ড. ইউনুসের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে, সরকারি সংস্কারের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পরিবর্তনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।