রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ,ফরিদপুর ||ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুড়িয়া ইউনিয়নে এলজিইডি’র আওতায় সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হতে না হতেই প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে সড়কের কার্পেটিং। শিশুদের পর্যন্ত দেখা গেছে কার্পেটিং তুলে খেলতে।
গত ১৪ জুন বিকেলে পাচুড়িয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা-বড়িরহাট পর্যন্ত প্রায় ৩৭০০ মিটার দীর্ঘ পাকা সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করে ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মাহামুদ ট্রেডার্স’। প্রকল্পের ব্যয় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৩০০ মিটার ১০ ফুট এবং ২৪০০ মিটার ১৩ ফুট প্রস্থের।
কাজের শুরুতেই নানা অনিয়ম ধরা পড়ছে। প্রাইম কোড দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় সময় না রেখেই কার্পেটিং শুরু করা হয়েছে। ধুলাবালি পরিষ্কারের কোনও উদ্যোগ না নিয়েই বিটুমিনবিহীন অবস্থায় কার্পেটিং চালানো হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টির মধ্যেই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে দায়সারা কাজ চালিয়েছে ঠিকাদার। বাঁধা দিলে এলজিইডির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাজ অব্যাহত রাখা হয়। ফলে কাজ শুরুর পরদিনই চাকা ঘষা বা হাতের টানেই উঠে যেতে থাকে কার্পেটিং।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী অনেকেই বলেন “আমরা দেখেছি সড়কের ওপর একদম পাতলা একটা আস্তর দিয়েছে। রাস্তা চুইয়ে ধুলা বের হয়! এটা কোনো উন্নয়ন না, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
সড়কের সামগ্রী প্রস্তুত হচ্ছে পাশের বোয়ালমারী উপজেলার ভাটপাড়া এলাকার একটি ইটভাটায়। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই মালামাল আসছে। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় নেই কোনও সাইনবোর্ড—যেখানে সরকারি প্রকল্পে তা বাধ্যতামূলক।
তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক রাসেল বলেন, “প্রাইম কোড দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কার্পেটিং করলে এমনটা হয়। তবে কিছু সাদা পাথর পড়ে গেলেও গুণগত মান নষ্ট হয় না।”
ঠিকাদার মাহামুদ দাবি করেন, “আমি ১১০ শতাংশ কাজ করছি। এলাকার কিছু লোক পিচের নিচে কোদাল ঢুকিয়ে রাস্তা নষ্ট করছে। আমি তাদের নামে অভিযোগ দিয়েছি।”
এদিকে উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম জানান, “আমরা কাজের মান পর্যবেক্ষণ করছি। কার্পেটিং শক্ত হতে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। যদি অনিয়ম হয়, ঠিকাদারকে দিয়ে পুনরায় কাজ করানো হবে।”
তবে প্রকৌশলী আরও অভিযোগ করেন, ‘স্থানীয়রা ঠিকাদারি কাজে বাধা দিচ্ছে, আমাদের কর্মীদের হেনস্তা করছে, মারধরের হুমকি দিচ্ছে, এমন অবস্থায় নিরাপদে কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।”
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে যতটুকু বুঝতে পেরেছি কাজে অনিয়ম মনে হয়নি। পিচ শক্ত হতে ৭২ ঘন্টা সময় লাগে। তার আগেই স্থানীয়রা পিচ তুলে ফেলেছে। কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় কোন মহলের উষ্কানী থাকতে পারে।
জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘এলাকাবাসী নিজেরাই কোদাল দিয়ে রাস্তা খুঁড়ে অভিযোগ তুলে ভাইরাল করছে। আমার অধীনস্থ কর্মকর্তারা সৎ—এই প্রকল্পেও তদারকি হয়েছে। আপনারা সরেজমিনে যান, তদন্ত করে সত্য তুলে ধরুন।
এদিকে অনিয়মের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে জোরালো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল বলছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এ ধরনের দুর্নীতি কোনোভাবেই বরদাশতযোগ্য নয়।
অবিলম্বে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা দাবি করেছেন তারা।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।