অদিতি সাহা, খুলনার খবর ||প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ আম বিদেশে রপ্তানি হয়, তার ৭০ শতাংশই রাজশাহীর। চলতি বছরও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে।
কিন্তু এ যাত্রায় নেই রাজশাহীর আম। গত তিন বছর লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২২ দশমিক ১১ শতাংশ আম রপ্তানি হয়েছে এই জেলা থেকে। ফলে বিপুল পরিমাণ আম বিদেশে পাঠাতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়ছেন স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, রাজশাহীর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর আমবাগানের মধ্যে বাঘা উপজেলায় রয়েছে আট হাজার ৫৭০ হেক্টর বাগান। এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্যে আমের মধ্যে রয়েছে গোপালভোগ, হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, তোতাপুরি, ফজলি ও লখনা। এ আম ১৪ বছর ধরে রপ্তানি করা হয় ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
গত বছর বাঘা থেকে ১০৫ টন আম ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু এবার ২০০ টন আম পাঠানোর কথা থাকলেও এক টনও পাঠানো সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে চাষিরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে আমের রং ভালো না হওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আম নিতে আগ্রহী নয়। ফলে এবার এ উপজেলার আম রপ্তানি হচ্ছে না।
এ কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হতাশার মধ্যে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর রাজশাহী অঞ্চলে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হয়েছে ছয় হাজার ৭২০ টন। এর মধ্যে রাজশাহীতে ২০০ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয় হাজার টন, নওগাঁয় ৫০৫ টন এবং নাটোরে উৎপাদন হয়েছে ১৫ টন। চলতি বছর আমের রপ্তানি শুরু হলেও শুধু রাজশাহী জেলা থেকে রপ্তানি করা যায়নি।
এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৭ টন আর নওগাঁ থেকে ৪ দশমিক ৮ টন। অর্থাৎ চলতি বছর আম রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২১ দশমিক ৮ টন। ফলে বিপুল পরিমাণ আম এবারও থেকে যাবে রপ্তানির বাইরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আম রপ্তানিতে সরকারিভাবে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য মানসম্মত আম উৎপাদন করে বিদেশে রপ্তানি করা। এ প্রকল্পের অধীন কৃষকদের উন্নত কৃষি পদ্ধতি, রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা এবং ভালো জাতের আম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও আমের ফলন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা করা হয়, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।
এত পরিমাণে খরচের পরও দেখা মিলছে না সাফল্যের।
কৃষি বিভাগ ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর আমের প্রধান সমস্যা ফাইটোস্যানিটারি সনদ জটিলতা। বিদেশে আম রপ্তানির জন্য স্বাস্থ্য সনদ (ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট) প্রয়োজন হয়।
অনেক সময় এসব সনদ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও বিলম্ব হয়। তা ছাড়া এখানে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট না থাকাও একটি বড় সমস্যা। ইউরোপসহ অনেক দেশ আমদানি করার আগে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট চায়, যা বাংলাদেশে শুধু ঢাকায়ই রয়েছে।
শুধু তাই নয়, আম সংরক্ষণে নেই সঠিক কোনো ব্যবস্থা। মান অনুযায়ী প্যাকেট ও গ্রেডিং না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যায়। বিমান ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয় বেশি হওয়ায় লাভজনকভাবে আম রপ্তানি করা কঠিন হয় বলে চাষিরা জানান ।
আমচাষি ও ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস মোড়ক তৈরি করে দিয়েছিল। গত কয়েক বছর ওই মোড়কে আম প্যাকেটজাত করে বিদেশ রপ্তানি করা হয়। কিন্তু এবার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আম নেয়নি।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এবার অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে আমের রং রপ্তানিযোগ্য না হওয়ায় তারা গ্রহণ করেনি।
রাজশাহীর বিপন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেডের মালিক হাফিজুর রহমান খান বলেন, আমের এক্সপোর্ট লেভেলে কয়েকটি ধাপ আছে। তবে নিরাপদ স্থান, প্যাকিং, গ্রেডিং, কার্গোবিমান ইত্যাদি সমস্যার কারণেই আমরা আম উৎপাদন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আম রপ্তানিতে সমস্যার কথা বারবার সরকারকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলেছি। তারা শুধু আশ্বাস দেয় কিন্তু সমাধান করে না।
রাজ চাঁপাই অ্যাগ্রো ফুড প্রোডিউসারের সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, আগে আমরা তিন-চার হাজার টন আম পাঠিয়েছি। এবার মাত্র ৫০০ টন বিদেশে যাবে।
তবে এ বছরের আম রপ্তানি এখনো শুরু হয়নি। এতে আমাদের সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেছি প্যাকেজিং হাউস রাজশাহীতে দেওয়া হোক। আমরা ১০ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, রাজশাহী থেকে আম রপ্তানি এখনো শুরু হয়নি। ঈদ ও অনিয়মিত বৃষ্টির কারণে দেরি হচ্ছে। তবে এবার চীনে আম রপ্তানি হবে। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে আম রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম।
এর কারণ নিজস্ব কার্গোবিমান নেই। এক কেজি আম পাঠাতে ৫০০ টাকা পরিবহন খরচ পড়ে যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাঠাতে এ খরচ কম।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।