এস.এম.শামীম, দিঘলিয়া খুলনা ||বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রনেতা সুমিষ্টভাষী জনপ্রিয় ছাত্রনেতা স্ত্রীকে বিশ্বাস করে নিঃস্ব প্রবাস ফেরত, মৃত্যুর প্রহর গুনছেন আ ন ম মুরাদ হোসেন।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সফল সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৮ সালে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে কিছুটা চাপে পড়েন তিনি।
মায়ের অনুরোধে সৌদি প্রবাসী ছোট ভাই জাহিদ হোসেন মিল্টন ওই বছর তাকে ভিসা দিয়ে সৌদি আরব নিয়ে যান। সৌদি যাওয়ার পর সেখানে ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে মাসিক বেতনে চাকুরিতে যোগদান করেন। ভালোবেসে বিয়ে করা স্ত্রী ছিলেন আপন খালাতো বোন। তার ব্যাংক একাউন্টে আয় রোজগারের অর্থ পাঠিয়েছেন নিয়মিত। স্বামীর পাঠানো অর্থ দিয়ে নিজের নামে জায়গা জমি, দোকানপাট কিনেছেন।
২০ বছর পর দেশে ফিরে দেখেন তার কিছুই নেই। ক্ষোভে দুখে ৪ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। নির্জন ঘরে একাকীত্ব মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ৫৮ বছর বয়সী মুরাদ হোসেন।পরিবার ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী থেকে জানা যায় , বিদেশ যাওয়ার আগে মুরাদ ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের সভাপতি থাকাকালীন আপন খালাতো বোন মাহফুজা সুলতানা খালেদার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
এ বিবাহে পরিবারের কারো সম্মতি ছিল না। বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে স্ত্রী’র নামে টাকা পয়সা পাঠাতে থাকেন,এভাবে প্রবাস জীবনের ২০ বছর আয় রোজাদারের একটা বড় অংশ স্বর্ণালংকার স্ত্রী’র কাছে পাঠিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে যখন তিনি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে দেশে চলে আসেন তখন এককালীন পাওনা সার্ভিস বেনিফিটের ১৭ লাখ টাকা স্ত্রী’র হাতে তুলে দেন।
বিদেশ যাওয়ার দশ বছর পর তার সম্মতিতেই স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকার ফার্মগেট সংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ২০ বছরের প্রবাস জীবনে মুরাদ ছুটিতে অনেকবার দেশে এসেছেন, স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে সময় কাটিয় ছুটি শেষে আবারও কর্মস্থলে ফিরে গেছেন।
তার পাঠানো অর্থ দিয়ে স্ত্রী মাহফুজা সুলতানা খালেদা নিজ নামে ঢাকায় দুইটি দোকান, খুলনার তেরখাদা উপজেলার কোলাপাটগাতি এলাকায় দশ বিঘা জমি, বাবার বাড়ি গোপালগঞ্জের বনগ্রামে ১ বিঘা জমি ক্রয় করেন। স্বামীর পাঠানো বাকি অর্থ তার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২০১৭ সালে সে সৌদিআরব ছেড়ে দেশে চলে আসেন। এরপর ঢাকাতে ভাড়া বাসায় স্ত্রীর ও সন্তানদের সাথে বসবাস শুরু করেন। দেশে আসার পর স্ত্রী তাকে নানাভাবে অবজ্ঞা, অবহেলা করতে থাকে। স্ত্রী, সন্তানদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন।
তার কথায় কোন গুরুত্বই দেয় না ভালোবেসে বিয়ে করা স্ত্রী। টাকা পয়সা নিয়েও শুরু হয় স্ত্রী’র সঙ্গে বিবাদ। ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো দু’জনের মধ্যে।এভাবে চলতে থাকে ৪ বছর। স্ত্রী সন্তানদের অবহেলা সহ্য করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।
হতাশা, মনেরকষ্ট আর বুক ভরা দুঃখ নিয়ে ফিরে আসেন পৈত্রিক ভিটা দিঘলিয়ার সদর ইউনিয়ন ৭নাম্বার ওয়াট ফরমাইসখানা গ্রামে। নিজের একাকীত্ব এবং মনোকষ্ট দূর করতে ২০২০ সাল আবারও সক্রিয় হন রাজনীতিতে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতির পদ পান। নিজের ফেসবুক আইডিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাটে সংগঠিত একটি খুনের পেন্ডিং মামলায় তাকে জড়ানো হয়।
ওই মামলায় তাকে দুইবার জেলে যেতে হয়। দুইবারই তার ছোট ভাই প্রবাস ফেরত জাহিদ হাসান মিল্টন চেষ্টা চালিয়ে জামিনে বের করে আনেন। এ ঘটনার পর থেকে তিনি আবারও হতাশ হন এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। এরপর একে একে চারবার ব্রেন স্টোক করে স্মৃতি শক্তি, শারীরিক সক্ষমতা, উপলব্ধিবোধ সবকিছু হারিয়ে ফেলেন।
শরীরে কোন কাপড় রাখতে পারেন না। নির্জন একটি ঘরে একাকী বসবাস করছেন। এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন ৫৯ বছর বয়সী নিঃস্ব প্রবাস ফেরত মুরাদ। মুরাদ হোসেনের ছোট ভাই জাহিদ হাসান মিল্টন বলেন, ‘চার বছর হল আমার ভাই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। স্ত্রী সন্তান কেউ তার খবর নেয় না। প্রবাস জীবনের ২০ বছরের রোজগারের অধিকাংশই স্ত্রী’র নামে পাঠিয়েছেন।
তার কষ্টার্জিত উপার্জনের অর্থ দিয়ে ঢাকা শহরে তার স্ত্রী সন্তান সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছে। আর আমার ভাই নিঃসঙ্গ একাকীত্ব নির্জন ঘরে মৃত্যুর প্রহার গুনছেন। ভাইয়ের এক মেয়ে দুই ছেলে। ছেলে দুইটা বিবাহিত।
তিনি বলেন, আমি পরিবার নিয়ে থাকি খালিশপুরে। সেখান থেকে ভাইয়ের সাধ্যমত খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার ভাই বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অটো পায়খানা প্রস্রাব হয়ে যায়, সে টের পায় না। এ কারণে তার কাছে কোন কাজের লোকও থাকতে চাই না। চিকিৎসকরা বলেছেন, ভালো নার্সিং হলে তার অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।