খুলনার খবর ||নির্মাণ কাজে দীর্ঘ সূত্রিতায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক এখন যেন চলাচলে অনুপযোগীই নয়; বরং মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি হলে কাঁদা আর রোদ হলে ধুলা। সড়কটি পাকা হলেও দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
তবে মনে হতে পারে এটি মহাসড়ক হলেও বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে পরিবহণ ও ভারী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবহন চলাচল করে থাকে। প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে ও উল্টে যাচ্ছে যানবাহন।
প্রতিদিন শিক্ষার্থী ও নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এ পথে বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। ট্রাকে-ট্রলিতে করে নেয়া মাটি ও বালু রাস্তার উপরে পড়ে কাঁদা-মাটিতে একাকার হয়ে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই সড়কে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে উপজেলার প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ মহাসড়ক দিয়ে ৮-১০টি জেলার মানুষ চলাচল করে। তাছাড়া নওয়াপাড়া নদী বন্দর ও বেনাপোল স্থল বন্দরের বিভিন্ন পণ্য এ সড়ক দিয়ে পরিবহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বিশেষ করে দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানিকৃত সার নদী পথে নওয়াপাড়া নদী বন্দরে এনে তা খালাস করা হয়।
এখান থেকে পরিবহনের মাধ্যমে সে সার উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ হয় যার মধ্যে খাদ্যশস্যও রয়েছে। এখন চাষাবাদের ভরা মৌসুমে সড়কের বেহাল দশার কারণে সঠিক সময় সার পরিবহনের মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো সম্ভাব হচ্ছে না।
সড়কের দুরবস্থার কারণে ট্রাক চালকরা এখান থেকে সারসহ সকল পণ্য পরিবহনে অনিহা প্রকাশ করছে। এতে করে কৃষকদের সময়মত সার না পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। সঠিক সময় সার না পেলে চাষাবাদ চরমভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
কয়েকজন ট্রাক ড্রাইভার জানিয়েছেন প্রতিনিয়তই ২/৩টা গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। এছাড়াও জাহিদুল ইসলাম নামের ট্টাক ড্রাইভার জানান, গত সোমবার রাত তিনটার সময় এসেছি প্রায় ১৩ ঘন্টা অপেক্ষা করছি এখনো পর্যন্ত এই ১ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে পারিনি। আমরা এ সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই। তা না হলে খুব শিগগিরই সমস্যা আরো তীব্র থেকে তীব্রতা ধারণ করবে।
স্থানীয়রা জানান, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন মোটরসাইকেল ও ছোট ছোট গাড়ির চালকরা। পাকা রাস্তার উপর ভেজা কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে সৃষ্টি হয় এক মরণ ফাঁদ। রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চলাচল ও হেঁটে পথ পাড়ি দিতে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে ইটভাটার মালিক ও বালি-মাটি ব্যবসায়ীদের লাইন্সেবিহীন ট্রাক্টর, ডাম্পার ট্রাক, ট্রলি নিয়মিত মাটি ও বালি বহন করে থাকে। এই ট্রলি ও ট্রাক থেকে বালি-মাটি পড়ে রাস্তার বেহাল দশার সৃষ্টি হয়। এই মাটি রোদের সময় ধুলা আর বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল কাঁদায় পরিণত হয়।
মেহেদি নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হয়। ধুলায় কোন কিছুই দেখা যায় না। আবার বর্তমানে কাঁদার কারনে রাস্তায় চলাচলে অনেক সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।
পরিবহন চালক রমজান আলী বলেন, বছর জুড়েই এই রাস্তায় চলাচল করতে দুভোর্গ পোহাতে হয়। বর্ষা হলেই চলাচলে দুর্ভোগ বাড়ে আবার বর্ষা গেলে ধুলায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এবং ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
পরিবহন যাত্রী অনিক অধিকারী বলেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর অংশ এখন যেন মরণফাঁদ। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। যাত্রী সাধারণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়িত। নওয়াপাড়া থেকে যশোরের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি চেঙ্গুটিয়া উড়োতলা নামক স্থানে পৌঁছালে সড়কের বেহাল দশা ও জ্যামের কারনে ২ ঘন্টা গাড়ির ভিতর বসে আছি।
এদিকে নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশষ্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুরে আলম বাবু পাটোয়ারী বলেন, মোকাম থেকে সারসহ পণ্য পরিবহনে চালকরা অনিহা প্রকাশ করায় এ বন্দরে বার্জ কারোগা থেকে থাকা সার পণ্য সঠিক সময় খালাস করা যাচ্ছে না। এতে করে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সময়ের জন্য ডেমারেজ গুণতে হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ক্ষোভের সাথে বলেন, সড়কটি কাদা মাটি ভিজে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্ত জমে যায় পানিতে। আর বৃষ্টি না হলে গাড়ির চাকার সঙ্গে উড়ে ধুলা। রাস্তায় মোটরসাইকেল চালকেরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ফলে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের, আমাদের এ দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।
এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে ওই এলাকার সড়কে যানবহন যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে রাস্তা ব্লক হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের টিম ২৪ ঘন্টা মহাসড়কে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ বলেন, এ ব্যাপরে রাস্তার কন্ট্রাক্টরকে ডাকা হয়েছিল তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হলেও কাজ শুরু হবে এবং আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।