মোঃ জসিম উদ্দিন তুহিন যশোর প্রতিনিধি ||জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, একটি বড় দল লক্ষ-কোটি মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। আমাদের ওইসব ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।
আওয়ামী লীগের সরকারেরও লক্ষ-কোটি লোক ছিল। কিন্তু আমরা কয়েক জন যখন গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে নেমে ছিলাম, তখন আবাবিল পাখির মতো মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামবো।
আজ শুক্রবার যশোরে‘জুলাই পদযাত্রা’ শেষে শহরের ঈদগাহ মোড়ে দলীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সদস্য সচিব আকতার হোসেন,মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, এনসিপি নেত্রী, সামান্তা শারমিন, ডা. মিতু, আতাউল্লাহ ,সাকিব শাহরিয়ার,ইহাহিয়া জিসান,খালেদ সাইফুল্লাহ জুয়েল, সালমান জাভেদ ।
নাহিদ ইসলাম বলেন,বাংলাদেশে এর আগে যেই দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা সরকারি বাহিনী ও আমলাদের দলীয়করণ করেছে। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানই নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও কোনো রাজনৈতিক দলের অনুসারী হতে দেওয়া যাবে না।
তাদের খুন-গুমের সঙ্গে যুক্ত করে কলঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। এসব নিয়েই কাজ করছে এনসিপি।চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা কাউকে ছাড় দেবেন না। আমরা যশোরেও আর চাঁদাবাজি দেখতে চাই না। এলাকার চলমান চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আপনাদের সরব হতে হবে। এমনকি এনসিপির মধ্যেও যদি কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী থেকে থাকেন তারাও সাবধান হয়ে যান।
দলমত নির্বিশেষে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও সরব হতে হবে।নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, এ দেশের নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।গণ-অভ্যুত্থানের পরও যদি তারা পরিবর্তিত না হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
আমরা ইনসাফভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলে দেশে সংস্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।তিনি বলেন, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থা নাজুক। আজ অবধি আইসিইউ ব্যবস্থা চালু হয়নি।
কিছু হলেই মানুষকে খুলনা বা ঢাকায় দৌড়াতে হয়। ভবদহ অঞ্চলের মানুষের কষ্টের কথা কে না জানে? সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার কিংবা বেনাপোলের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়েও আমরা অবগত। এসব সমস্যা সমাধানে এনসিপি কাজ করছে।
তিনি সবাইকে এনসিপির পাশে থাকার আহ্বান জানান সংগঠনের সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে যখনই আন্দোলন হয়, তখন ছাত্ররাই জীবন দেয়, রক্ত দেয়; আর কিছু রাজনৈতিক দল ফায়দা লোটে। এবারো আন্দোলন হলো। ওরা ভেবেছিল, আন্দোলনের পর আমরা ঘরে ফিরে যাব।
কিন্তু আমরা রাজপথেই রইলাম। তখনই তাদের মধ্যে ভয় ঢুকে যায়।তিনি বলেন, আমরা রাজনীতিতে এসেছি, শাপলা প্রতীক চেয়েছি। তাতেই তাদের গা জ্বলছে। এখনও হাসিনার দোসররা সক্রিয়। সংস্কার সবার আগে দরকার। আমরা এখনও আলোচনার টেবিলে বসতে প্রস্তুত। আসুন, আলোচনায় বসুন, না হলে আমাদের আবার রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন।
যেমনটা জুলাই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমেছিল।তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন ভারতকে যা দিয়েছি, তা আজীবন মনে রাখবে। ভারত ঠিকই মনে রেখেছে, তাই তো তাকে আশ্রয় দিয়েছে।
আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু তাদের দাদাগিরি মেনে নেব না।তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানান—শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বললে একটি দল রাগ করে। আমরা টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কথা বললে আরেকটি দল রাগ করে।
আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি বলেই একদল ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে।তিনি বলেন, একটি দল ভারতে পালিয়েছে, আরেকটি দল পালিয়েছে লন্ডনে। তারা বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওই দল আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করছে।
তিনি অভিযোগ করেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এনসিপিকে নির্বাচনের বাইরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যদি কেউ আমাদের সংস্কার কার্যক্রমে বাধা দেয়, তাহলে ধরে নেব তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে।তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চাই, বিচার চাই, নির্বাচনও চাই। কিন্তু একটি দল শুধুই ‘নির্বাচন, নির্বাচন’ করে। সংস্কার কিংবা বিচারের কথা বললেই রেগে যায়।
কারণ তারা এসব চায় না।তিনি বলেন,১৯৭১ সালে যশোর প্রথম স্বাধীন হয়েছে। তাই এই যশোর থেকেই সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের নেতৃত্ব দিতে হবে।দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন,আমরা বিশ্বাস করি—সময় এসেছে মানুষের ন্যায্য বিচার, সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠনের জন্য সবাইকে এক হওয়ার। যশোরে আমরা আর কোনো চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস দেখতে চাই না। তিনি সকলকে এনসিপির পাশে থাকার আহ্বান জানান। পথসভায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে হাজির হন। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ঈদগাহ ময়দান।দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শ্লোগানকে সামনে রেখে যশোরে সকালে জুলাই আন্দোলনের আহত ও শহীদ পরিবারদের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা করে।
পরে মুজিব সড়কের মডেল মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় মসজিদে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। নামাজ শেষে পদযাত্রা শুরু হয়। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো শহর। পরে শুরু হয় পথ সভা। সভা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।