খুলনার খবর ||খুলনায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ফুলতলা শাখার স্টোর কক্ষে গ্রাহকের চোখ ও মুখ বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং প্লাস দিয়ে নখ উঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী সাইফুলাহ হাজেরী (৩৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পঞ্চম তলার পেইন বেডে চিকিৎসারত রয়েছে।
বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বেডের ওপর রক্তমাখা সাদা পায়জামা ও গেঞ্জি পরে কাতরাচ্ছেন সাইফুলাহ। তার দুই পায়ে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর কারণে কালো ও নীল হয়ে গেছে। যেটা কম্বল দিয়ে ঢেকে রেখেছে স্বজনরা। হাতের আঙ্গুল প্লাস দিয়ে উঠানোর চেষ্টার কারণে রক্তজমাট হয়ে পড়েছে। পাশে দুই বোন, মামা এবং বাবার বোবা আর্তনাদ।
কারণ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ইতিমধ্যেই হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা। কোন ভাবেই যেন মিডিয়ায় না আসে এবং কোন মামলা না হয় সেই বিষয়ে তারা তোড়জোড় শুরু করেছে।
এদিকে ফুলতলা উপজেলার বেলেপুকুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুলাহ হাজেরীকে ব্যাংকটির ফুলতলা শাখায় মঙ্গলবার বিকেলে অমানবিক নির্যাতনের পর বিভিন্ন সাদা কাগজে স্বাক্ষর, ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষরসহ ব্যাংকটির মনগড়া লেখা একটি কাগজেও তার স্বাক্ষর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির খুলনার জোনাল অফিসের কর্মকর্তা ও ফুলতলা শাখা ব্যবস্থাপক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাইফুলাহকে দেখতে গিয়েছেন। পাশাপাশি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অধিকতর তদন্ত শুরু হয়েছে।
জানা যায়, নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ন গেট এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী এ এইচ এম শফিউললা হাজেরীর ছেলে ভুক্তভোগী সাইফুলাহ হাজেরী। চলতি মাসে এজেন্ট ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ কাগজি মাহবুবুর রহমান এবং মার্কেটিং অফিসার মনিরুল গাজী।
এই ঘটনার পর ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি টিম সেখানে আসে। পাশাপাশি দুইজন প্রিন্সিপাল অফিসার দিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়। অন্যদিকে গ্রাহকদের তাগেদা এবং ব্যাংকটির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে ফুলতলার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা মরিয়া হয়ে পড়ে। তারা এজেন্ট ব্যাংকটির মালিক শফিউললাহ হাজেরীর নিকট থেকে একাধিক ব্ল্যাংক চেকসহ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
ভুক্তভোগী সাইফুলাহ হাজেরী বুধবার মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতিবেদককে জানায়, মঙ্গলবার ফুলতলার ইসলামী ব্যাংক শাখায় আমাকে যেতে বলা হয়।
আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে আমি ব্যাংকে যাই। ঐ সময় আমার বাবাও ব্যাংকে ছিলেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাকে এজেন্ট ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বিভিন্ন ভাবে দোষারোপ করার চেষ্টা করে। আমি তাদের বলি আমরা যদি টাকা আত্মসাৎ করতাম তাহলে এভাবে চলাফেরা করতাম না। তাছাড়া আমার বাবা জমি বিক্রি করে খুব দ্রুতই এই ক্ষতিপূরণ দিবে। ইতিমধ্যে আপনারা ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন।
তখন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলে, দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে হবে না হলে সমস্যা। পাশাপাশি আমার ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি তখন আমার বাবাকে চেকবই আনার জন্য বাড়িতে পাঠাই। এই সুযোগে ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার আশিক আমার হাত ধরে ব্যাংকটির স্টোর রুমে নিয়ে যায়।
সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে আমার চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে ৪/৫ জন। এরপর তারা হাতুড়ি দিয়ে আমার পায়ের তালু এবং হাটুতে পেটাতে থাকে। পাশাপাশি প্লাস দিয়ে আমার নখ উঠানোর চেষ্টা করে। এরপর তারা স্ট্যাম্প, চেকসহ সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর করিয়ে রাখে। এই ঘটনায় আমরা চিকিৎসা শেষে আইনগত কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা পরিবারের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।
হাসপাতালে থাকা সাইফুলাহ’র বোন ও মামা জানান, ব্যাংকের ভিতর এমন ভাবে হাতুড়ি ও প্লাস দিয়ে নির্যাতন করাটা কতটা অমানবিক আপনারাই বলেন। এরপর ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসেছে ভুল স্বীকার করতে। তারা উন্নত চিকিৎসা দিতে চায়। আমরা পারিবারিক ভাবে এই ঘটনার বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেটা পরে সিদ্ধান্ত নিবো। আগে রোগীর চিকিৎসা জরুরি।
ভুক্তভোগীর বাবা এ এইচ এম শফিউলাহ হাজেরী বলেন, গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য আমরা জমি বিক্রির কাজ শুরু করেছি। ব্যাংকের কথা অনুযায়ী চেক ও স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর করেছি। তারপরও আমার ছেলেকে এই ভাবে ব্যাংকের ভিতর নির্যাতন করাটা ঠিক হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখা ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান জানান, ঘটনার সময় আমি ব্যাংকে ছিলাম না।
কি হয়েছে এবং কেন হয়েছে এটা আমি পরিস্কার ভাবে জানি না। তবে এই বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। যে কর্মকর্তা এই ঘটনার সাথে জড়িত তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংক খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার ইমামুল বারী বলেন, বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার রাতে জেনেছি। হাসপাতালে এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় আমাদের লোক পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।