স্টাফ রিপোর্টার || পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যা একটি ষড়যন্ত্রেরই অংশ। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু প্রমাণ না দিয়ে ঢালাওভাবে নানা অভিযোগ তুলছে । এটা ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’চাপানোর মতো।
খুলনা ও সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের দীর্ঘদিনের সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি কুচক্রী মহল মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নাজমুল আহসানের সম্মান নষ্ট করছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
অনুসন্ধানীতে জানা যায়, গত ৩ মার্চ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিলকৃত স্মারকলিপিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব ও সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের বিরুদ্ধে অবৈধ নির্বাচন, খুন, গুমে অংশ নেয়াসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এসব হত্যাকান্ডের বিচার ও তার চাকরিচ্যুতির দাবী জানানো হয়েছে।
২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে অর্ধশতাধিক জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন মর্মে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ তারিখ জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর থেকে সাতক্ষীরায় সহিংসতা শুরু হয়৷ রায় ঘোষণার দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শহরের সার্কিট হাউজ মোড়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশ-বিজিবির সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সাতক্ষীরা সদরের আগরদাড়ি ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের আব্দুল বারির ছেলে ইকবাল হোসেন তুহীন (১৭), একই উপজেলার বেলেডাঙা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আবুল হাসান (২২), পায়রাডাঙা গ্রামের অজিহার রহমানের ছেলে শাহীন আলম (২৪), শশাডাঙা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র আলী মোস্তফা (১৭), খানপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৫), গাজীপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৬) ও আশাশুনি উপজেলার তুয়ারডাঙা গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আব্দুস সালাম (৪৭)। এরা সবাই জামায়াত-শিবিরের কর্মী বলে দাবি দলীয় নেতাদের।
এরপর থেকে ২০১৩ সালের প্রায় পুরো সময়টাই সাতক্ষীরায় সহিংসতা অব্যাহত ছিল। ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাত থেকে শুরু হয় যৌথবাহিনীর অভিযান। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত যৌথবাহিনী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-ছাত্রশিবিরের ৫৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
এ সময় তাদের হাতে নিহত হন জামায়াতের জাহাঙ্গীর মোড়ল, সাহেব বাবুসহ ৭ জন। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক, নায়েবে আমীর রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ও আগড়দাঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আনারুল ইসলামসহ শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত যৌথবাহিনীর অভিযানের পর সাতক্ষীরার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।নাজমুল আহসান ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর অপরাহ্নে সাতক্ষীরার নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন।
অর্থাৎ ২০১৩ সালে তিনি মাত্র শেষ ৬ দিন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। এই ৬ দিনে সাতক্ষীরায় কোন সহিংসতার ঘটনা হয়নি। ২০১৪ সালে সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতে পুলিশ কর্তৃক বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৪ সালের ঘটনাগুলোর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে বিএনপি নেতা ও আগড়দাঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম হত্যার বিষয়েও দায়ীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, আনারুল হত্যার ঘটনাটি ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তারিখের অর্থাৎ নাজমুল আহসান সাতক্ষীরায় যোগদানের আগের ঘটনা। তাছাড়া এসকল ঘটনার সাথে জেলা প্রশাসকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
সুতরাং নাজমুল আহসানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ ভিত্তিহীন। তাছাড়া বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ৭ মাস পর আনীত এসকল অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
নাজমুল আহসান ২৫/১২/২০১৩ থেকে ২৬/০১/২০১৬ পর্যন্ত সাতক্ষীরার এবং ২৬/০১/২০১৬ থেকে ১১/০৫/২০১৭ পর্যন্ত খুলনার জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উভয় জেলাতেই তিনি জনগণের সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করেছেন।
গণশুনানী করে জনগনের সমস্যা শুনে প্রতিকারের চেষ্টা করেছেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা/প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। সাতক্ষীরায় তিনি লক্ষাধিক আমগাছ রোপন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল খনন, সোলার ভিলেজ স্থাপনসহ জনসেবা সহজীকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। খুলনায় তিনি ভিক্ষুক পুনর্বাসন, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রদান, ডিসি অফিসে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের স্থান সৃজনসহ উন্নত জনসেবা নিশ্চিতকরণে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সর্বোপরি তিনি উভয় জেলায় একজন জনবান্ধব জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। উক্ত কর্মকর্তার বিষয়ে না জেনে তার বিরুদ্ধে এ ধরণের ভিত্তিহীন অভিযোগ আনয়ন দু:খজনক বলছেন খুলনার সচেতন নাগরিকরা।
এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, আমি সাতক্ষীরায় যোগদান করি ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩। জামাতের তৎকালীন আমীর সাহেবের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভাঙ্গার বিষয় এবং আনারুল হত্যার ঘটনা আমার যোগদানের আগের। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে মামলা হয়েছে সেখানে ঘটনার তারিখ দেখলেই সেটা প্রমাণিত হবে। ১৪ সালের যে দুটি ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো পুলিশ দ্বারা সংঘটিত। এগুলোর সাথে জেলা প্রশাসকের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।