খুলনার খবর ||জীবনে একদিন হলেও নিজের টিনের ঘরে ঘুমাবো। এরকমটাই স্বপ্ন দেখছিলো শিমুল বেগম। নগরীর ২১নং ওয়ার্ডের ৪নং ঘাট এলাকায় রেলওয়ের জায়গায় ১৪ বছর যাবত বসবাস করছে শিমুল বেগম।
২০০৯ সালে আইলার কারণে শিমুলের ঘরবাড়ী সব বানে ভেসে যায়। শিমুলের থাকার যায়গায় থাকে শুধু পানি আর পানি। খলসিবুনিয়া গ্রামের শ্যামনগর সাতক্ষীরা জেলার নজরুল ইসলাম গাইনের ৩য় সন্তান শিমুল বেগম।
২০০৬ সালে গ্রামে থেকেই শিমুল বেগম বিবাহ করেন। বিবাহের প্রায় দুই বছর পরে স্বামী তাকে ছেড়ে ভারত চলে যায়,আর কোন দিন ফিরে আসে না। এদিকে শিমুলের একটি কন্যা সন্তান হয়। তার নাম রাখে রানু। রানু জন্মের পরে দেখতে পাইনি তার বাবাকে।
২০০৯ সালে আইলার পরে শিমুল তার সন্তান রানুকে নিয়ে চলে আসে খুলনার ২১নং ওয়ার্ডের রেলওয়ে কলোনীতে। ২০১৪ সালে শিমুল আবার দ্বিতীয় বিবাহ করে। কিন্তু সে বিবাহও বেশি দিন টিকে থাকেনি। দ্বিতীয় স্বামী ছিলো মাদকে আসক্ত। যার ফলে তাকে তালকা দিতে বাধ্য হয় শিমুল। কিন্তু এ ঘরেও শিমুলের আরোও একটি কন্যা সন্তান হয়।
এই দুই সন্তানকে নিয়ে শিমুল রেলওয়ে কলোনীতে বসবাস করতে থাকে। কোন রকম বাসায় কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করে। কিন্তু কাজ শেষে রাতে ঘুমাতে গেলে শিমুল থাকতো ভীত। তার ঘরের বেড়া ছিলো পলিথিনের এবং চাল ছিলো টিনের। কিন্তু একটা ঝুপড়ি মতো ঘর থেকে বৃষ্টির সময় ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে যেত। ঘরের দরজাও ছিলো নাজুক। শিমুল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলো।
২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস এর সহযোগিতা এবং হ্যাবিট্যাট এর অর্থায়নে শিমুল বেগম একটি নতুন রঙিন টিনের ঘর পায়।
জেজেএস’র প্রকল্প ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল হোসাইন বলেন, হ্যাবিট্যাট এর অর্থায়নে ২১নং ওয়ার্ডে শিমুল বেগমের মতো আরোও মোট ৩৩টি ঘরকে মেরামত করা হয়েছে। যাতে তাদের জীবনের মান উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করে।
শিমুল বেগম বলেন, আমার একটি স্বপ্ন ছিলো জীবনে একবার হলেও যেন টিনের নিজের ঘরে ঘুমাতে পারি। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পুরণ করেছেন। আমি শুকরিয়া জানাই মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি জজেএস ও হ্যাবিট্যাট এর কাছে। আমি আশা করছি জেজেএস ও হ্যাবিট্যাট যেন আমার মতো আরোও গরীব অসহায় পরিবার যাদের আমার মতো ঘরের অবস্থা তাদের ঘরগুলোও যেন নির্মান করে দেয়।
শিমুলের কন্যা রানু বলেন, আগে আমাদের ঘর থকে পানি পড়তো। বৃষ্টি হলে সারা রাত এখানে সেখানে পাতিল পেতে বসে থাকতাম এবং রাতে ঘুমাতে ভয় লাগতো। বেড়া ছিলো পলিথিনের। দরজা ভালো ছিলো না। এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি। বৃষ্টির পানিতে ঘর ভিজে যাওয়ার নেই ভয়।
২১ নং ওয়ার্ড সচিব এস, এম, আল মামুন বলেন, যদিও রেলওয়ের যায়গা সরকারী। কিন্তু এখানে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে এই বস্তিতে মানুষ বসবাস করছে। কিন্তু ঘরগুলো বসবাসের অযোগ্য।
উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস ও হ্যাবিট্যাট এর এই রকম উন্নয়ন মূলক কাজকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরোও বলেন, রেলওয়ে ও মন্টুর কলোনীর বস্তিতে সবাই গরীব ও অসহায়।
এরই মধ্য থেকে জেজেএস সুন্দর প্রক্রিয়ায় যাচাই বাছাই পূর্বক আমাদের সহযোগিতায় খুবই গরীব ও অসহায় পরিবারকে সহায়তা প্রদান করেছে।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।