শেখ মারুফ হোসেন, বাগেরহাট প্রতিনিধি||বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি যা শিশুদের শৈশব, শিক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাংলাদেশে এখনো বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক প্রথা ও দারিদ্র্যের কারণে বাল্যবিবাহ প্রচলিত আছে।
এই সমস্যা মোকাবেলায় স্কুলভিত্তিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং কমিউনিটি এনগেজমেন্ট সভা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিস ২০২৫ এর মে থেকে জুনের মধ্যে বাগেরহাট জেলার ৫০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি কমিউনিটি এনগেজমেন্ট সভা এবং প্রচারণার আয়োজন করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে, যেখানে গ্লোবাল প্রোগ্রাম টু এন্ড চাইল্ড ম্যারিজ (জিপিইসিএম)-৩য় ধাপ প্রকল্পের আওতায় সহায়তা করছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) এবং কনসার্ণ উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট (CWFD)। সভার মাধ্যমে শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে একত্রিত করে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, মেয়েদের শিক্ষার প্রচার এবং জেন্ডার সমতা সমর্থন করে চলেছে।
এই সভাগুলো এমন একটি সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে ভূমিকা রাখছে যেখানে প্রতিটি শিশু বাল্যবিবাহ এবং জোরপূর্বক বিবাহ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে এবং জীবনে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
শিক্ষা মানে সুরক্ষা- শিশুরা পড়াশুনায় থাকলে বাল্যবিবাহের ঝুঁকি তত কম থাকে। কমিউনিটির মতামত গুরুত্বপূর্ণ- মুক্ত আলোচনা থেকেই পরিবর্তনের শুরু। আইনের প্রয়োগ- সম্মিলিত সচেতনতা আইনের প্রয়োগকে কার্যকর করে। এই মূল বার্তা নিয়ে আজ ১৪ই মে বুধবার বাগেরহাট কামিল মাদ্রাসা, বাগেরহাট সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাগেরহাট ও যদুনাথ স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বাগেরহাট ০৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা, সহায়তা এবং ক্ষমতায়নের কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয় প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটি নেতারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে কমিউনিটিকে সচেতন করা, প্রাসঙ্গিক আইন ও নীতি সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি করা পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সভায় অংশগ্রহণকারীগণ।
বাল্যবিবাহ সম্পর্কে ধারণা। বিবাহের রাষ্ট্র নির্ধারিত বয়স, অধিকার এবং ঝুঁকি (স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তা) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করা হয় এ সভায়। বাল্যবিবাহের কুসংস্কার বনাম সঠিক তথ্য।
বিলম্বিত বিবাহে শিক্ষার ভূমিকা। পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সহায়তা। স্থানীয় হেল্পলাইন এবং আলাপন হেল্পলাইন পরিচিতি এর সেবা সম্পর্কে আলোচনা হয়ে এ সভায়।
এসভার মাধ্যমে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি। স্কুল ও কমিউনিটির মধ্যে আরও ভালো যোগাযোগ ও আন্ত:ব্যক্তিক সম্পর্ক তৈরি। ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট পথ তৈরি। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, এমন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে, এমনটাই আশা করছেন সবাই।
এই ধরনের কমিউনিটি এনগেজমেন্ট কার্যক্রম বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী সামাজিক বার্তা প্রদান করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হলে তারা নিজেরা যেমন এই সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারবে, তেমনি পরিবার ও সমাজকেও সচেতন করতে পারবে।
ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রম আরও বিস্তৃত আকারে পরিচালনার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নির্মূলের পথে বড় অগ্রগতি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বাগেরহাট জেলায় এই কার্যক্রমটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্কুল, পরিবার এবং সমাজের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এমনটাই মনে করেন শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃ্ন্দ, অভিভাবক, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজসহ অলোচকবৃন্দ।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।