এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির||সুন্দরবন থেকে ফিরে:বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তন মানে যে শুধু উষ্ণতা বৃদ্ধি তা নয়, এটি বাস্তুচ্যুত মানুষের আর্তনাদ, হারিয়ে যাওয়া গ্রাম আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের গল্প।
ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস হিসেবে খ্যাত মে আবারও তার চিহ্ন রাখছে ভয়াবহ আবহাওয়াগত সংকেত দিয়ে। গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উপকূলজুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর এবার আবারও একই মাসে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবার শুধু একটি নয়, বরং একই সপ্তাহে দুটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে।
সোমবার (১৯ মে) সকালে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুক পোস্টে জানান, বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৭ থেকে ৩০ মে’র মধ্যে যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূল এবং মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মধ্যবর্তী অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
এছাড়া তিনি জানান, একই সপ্তাহে আরব সাগরেও আরও একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়টি আগে এবং বঙ্গোপসাগরেরটি পরে তৈরি হতে পারে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক দপ্তরের তালিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রথম দুটি নাম নির্ধারিত হয়েছে ‘শক্তি’ এবং ‘মন্থা’। সাগর অনুযায়ী যেখানেই প্রথম ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হবে, তার নাম হবে ‘শক্তি’ এবং দ্বিতীয়টির নাম হবে ‘মন্থা’।
মোস্তফা কামাল পলাশ আরও জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অনেকটাই নির্ভর করবে আরব সাগরের ঘূর্ণিঝড়ের আচরণের ওপর। যদি আরব সাগরের ঝড়টি আগে শেষ হয়ে যায়, তবে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়টি অধিক শক্তিশালী রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২৯ থেকে ৩০ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। তবে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন আবহাওয়াবিদরা।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেড়েছে। আম্ফান, ইয়াস, মোখা এবং রিমালের মতো প্রলয়ঙ্করী ঝড়গুলো মে মাসেই আঘাত হেনেছে উপকূলে। এবারও সেই আশঙ্কাই ঘনীভূত হচ্ছে।বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি জলবায়ু পরিবর্তন, যেখানে রয়েছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে অস্তিত্বের লড়াইয়ের এক কঠিন অধ্যায়। প্রতিনিয়ত গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি যে শুধু আমাদের পরিবেশকেই হুমকির মুখে ফেলছে তা নয় নাড়িয়ে দিচ্ছে সামাজিক কাঠামো ও অর্থনীতির ভিত্তি।
উপকূল ভাঙছে, ঘূর্ণিঝড় বাড়ছে, গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে—জলবায়ু উদ্বাস্তু সংকটে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় রয়ে গেছে লাখো মানুষ অনিশ্চয়তার মুখে।
এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বর্তমান বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যাদের আমরা ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’ হিসেবে চিনি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই এই সংকটের নির্মম বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করছে। উপকূলীয় অঞ্চলে নদীভাঙন, লবণাক্ততার বিস্তার এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হাজার হাজার মানুষকে তাদের জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য করছে। তারা আশ্রয়ের সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছে, যা নগরায়ণের ওপর তীব্র চাপ তৈরি করছে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক নতুন নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে।
আর এই তাদের চেনা পরিবেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য মানুষদেরকেই মূলত “জলবায়ু উদ্বাস্তু” (Climate Refugee) বলা হয়
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।