অতনু চৌধুরী(রাজু) বাগেরহাট, প্রতিনিধি||বাগেরহাটের রামপালের ফয়লা বাজারে অবস্থিত বেসরকারি সু্ন্দরবন (প্রাঃ) হাসপাতালে ভুল অপারেশনে আবারো প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত সোমবার (২৬ মে) রাত ৯ টায় ওই হাসপাতালে অজ্ঞাত চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের এক ঘণ্টার মধ্যে তানিমা বেগম (২০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুুপুরে পরিদর্শন শেষে হাসপাতালটির অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার পাল।
সূত্র মতে জানা যায়, রামপাল উপজেলার ছোট নবাবপুর গ্রামের ফেরদৌসের স্ত্রী প্রসূতি তানিয়া বেগমকে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান করানোর দুই দিন পূর্বে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন সোমবার রাত ৯ টায় প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই অনভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে ভুল অপারেশন করার ফলে থিয়েটারেই রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন হাসপাতালের লোকজন তড়িঘড়ি করে দ্রুত খুমেক হাসপাতালে রেফার্ড করে।
সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানিয়াকে মৃত ঘোষনা করেন। এরপরে সু্ন্দরবন হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হাসান রিয়াজ নিহত প্রসূতির স্বজনদের সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দফারফা করেন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এমন ধরণের যে কোনো অপারেশনে সার্জনের সহকারী অবশ্যই একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকতে হবে। প্রতি ১০ শয্যার হাসপাতালে কমপক্ষে তিনজন নিবন্ধিত মেডিকেল অফিসার থাকতে হবে এবং স্বীকৃত ডিগ্রিধারী এনেস্থেশিওলজিস্ট ছাড়া এনেস্থেশিয়া প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে সুন্দরবন হাসপাতালে ছিল না কোনো ডিউটি ডাক্তার, সার্জনের সহকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন না কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক, এমনকি অপারেশন থিয়েটারে ছিল না মনিটরিং সিস্টেম, ব্লাড প্রেসার মেশিন, পালস অক্সিমিটার বা অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর।
হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম দেখতে পান। ও টিতে এ্যানেসথেসিয়া যন্ত্রপাতি অকেজো ও বিকল অবস্থায় দেখতে পান। তার মানে রোগীকে অপারেশন করার সময় এ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র চালু না করে এবং কোন এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকলেও রোগীকে অপারেশন করা হয়েছে।ইমার্জেন্সী সেবা চালু না থাকায় রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর আগেও এই হাসপাতালে অনেক প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, যদি সেবা প্রদান সংক্রান্ত বিধি বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে এসব প্রজ্ঞাপন বা বিধি কাদের জন্য ? ভুক্তভোগী পরিবার এবং মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাস্তি এবং নীতিমালা অনুসারে সকল বেসরকারি ক্লিনিক পুনর্মূল্যায়ন ও লাইসেন্স যাচাই করে দেখা।
এই ঘটনায় সুন্দরবন প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হাসান রিয়াজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে রামপালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে খালিদ হাসান নোমান জানান, বেসরকারি সকল হাসপাতালের অনিয়ম রোধে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহনসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার পাল জানান, একজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু খু্বই হৃদয় বিদারক। হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে ক্লিনিক চালানোর মতো সরকার নির্ধারিত কোন প্রকার উপযোগী যন্ত্রপাতি নেই। অপারেশন চলাকালীন তিন জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কেউ ছিল না। আজকে এখনো কাউকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন প্রকার অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
উল্লেখিত, ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৫’জন প্রসূতি রোগী ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। তা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। বিগত সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতিপয় প্রভাবশালী নেতা ও সুবিধাবাদী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এমন ধরনের ভয়ঙ্কর অনিয়ম করে আসছিল।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে এমন অব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল চলছে বলে মনে করেন সচেতনমহল।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।