এস.এম.শামীম, দিঘলিয়া খুলনা ||খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে হঠাৎ করে সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
স্বর্ণা, বালাম, মিনিকেট, আতপসহ সব জাতের চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় মাসের শুরুতেই খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ পরিবারগুলো।
পথের বাজার, গাজিরহাট, কোলা, সেনহাটি ও বারাকপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে, যেখানে কিছুদিন আগেও এটি ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে বালাম ও স্বর্ণা চালের দামেও বড় ধরনের উর্ধ্বগতি দেখা গেছে। সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।
দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল শ্রমজীবী মানুষেরা বলছেন, চালের দাম বাড়ায় পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ভ্যান চালক রমজান আলী বলেন, “আমরা দিনমজুর মানুষ।
প্রতিদিন যা কামাই করি, তা দিয়েই সংসার চলে। এখন চালের দাম এমন হারে বাড়লে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।” ইজিবাইক চালক সেলিম শেখ জানান, “গাড়ি চালিয়ে দিনে ৪০০ টাকা পাই, তার মধ্যে প্রায় সব টাকাই চাল কিনতেই চলে যাচ্ছে। এখন ওষুধ কেনা, সন্তানদের পড়াশোনা চালানো—সব কিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজমিস্ত্রি জব্বার ও কাঠমিস্ত্রি নজরুল ইসলাম। তাদের ভাষায়, চালের দাম বেড়ে যাওয়া মানেই অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়া। তারা মনে করেন, বাজারে একটা ন্যায্য ভারসাম্য থাকা জরুরি, যা রক্ষা করতে সরকারকে কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চালকল মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে বলে তারা বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে ভোক্তাদের একাংশ এই যুক্তিকে ‘পুরনো অজুহাত’ বলেই মনে করছেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বাজার অস্থির রেখে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা লাভবান হচ্ছেন, আর ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপজেলা প্রশাসনের তদারকি আরও জোরদার করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে বাজার মনিটরিং, মজুতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিমূল্যে চাল সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সংকট কিছুটা লাঘব করা যেতে পারে।
চালের দামবৃদ্ধি সম্পর্কে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আরিফুল ইসলাম বলেন, “যদি কোনো ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।” তিনি আরও জানান, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে।
চালের মূল্যবৃদ্ধি কেবল একজন ভোক্তার সমস্যা নয়, এটি একটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও নজরদারির ঘাটতি যতদিন থাকবে, ততদিন সাধারণ মানুষের দুঃসহ অবস্থা চলতেই থাকবে—এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।