রায়হান শরীফ সাব্বির,ঢাকা || রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টায় অপরূপ নির্মাণশৈলীর দৃষ্টিনন্দন এ টার্মিনাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার আকাশপথে সম্ভাবনার নবদিগন্ত উন্মোচিত হলো।
কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি শিশুদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং কথা বলেন। পরে টার্মিনালের করিডোর ঘুরে দেখেন। বিমানন্দরের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, তিনি লাগেজ চেকিং করান, বোর্ডিং পাস নেন এবং যথারীতি তিনি বিমান্দরের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে কাউন্টার পার হন। পরে তিনি প্রি বোর্ডিং সিকিউরিটি স্ক্যান করান এবং চলন্ত ওয়াকওয়ে পার হয়ে বোর্ডিং ব্রিজে যান।
বিভিন্ন স্পটে আলোকচিত্রে বিমান ও বিমানবন্দরের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী এগুলো অবলোকন করেন। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে নানা বিষয়ে ব্রিফ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
বিমানবন্দরের এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে থার্ড টার্মিনাল প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠানস্থলে পৌছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো অডিয়েন্স দাঁড়িয়ে সংগীতের সঙ্গে ঠোঁট মেলান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী,বিমান সচিব মেকাম্মেল হোসেন প্রমুখ।
পরে থার্ড টার্মিনাল,বিমান ও বিমানবন্দরের উন্নয়নের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। বেবিচকের কার্যক্রমের ওপরও একটি ডকুমেন্টরি দেখানো হয়।
অতিথিদের বক্তব্যের পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে খুলেছে ঢাকার আকাশ পথে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
পরে এ টার্মিনাল ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়।
সরকারের গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের অন্যতম সাফল্য এই থার্ড টার্মিনাল। নির্বাচনী বছর হওয়ায় খুবই দ্রুততার সাথে প্রজেক্টগুলো শেষ করা হচ্ছে।
এ টার্মিনালের অবকাঠামো নির্মাণকাজের বেশিরভাগই শেষ হয়ে এসেছে। দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন ও কার পার্কিং ভবন। বাকি কাজ সমাপ্ত করতে দিন-রাত নিরলস কাজ করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।নবনির্মিত থার্ড টার্মিনালে এরই মধ্যে লিফট, এসকেলেটর, ইমিগ্রেশন বুথ, দৃষ্টিনন্দন সিলিং, গ্লাস ও টাইলস ফিটিংয়ের কাজও প্রায় শেষ।বড় পরিসর ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন তৃতীয় টার্মিনাল থেকে পুরোপুরি সুবিধা পেতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত। তখন এই টার্মিনাল দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। তিন তলাবিশিষ্ট এই টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, তবে উদ্বোধনের সময় ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। এর মধ্যে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার।এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি।
আর আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদ্যমান দুই টার্মিনাল মিলে লাগেজ বেল্ট আছে আটটি। সেখানে তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য থাকছে ১৬টি লাগেজ বেল্ট। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকছে চারটি আলাদা বেল্ট।
তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া থাকছে এক হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে (টার্মিনাল-১ ও ২) বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হয়। সেখানে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সব মিলিয়ে তখন বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন।
পুরোনো টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি বিমান রাখা যায়। সফট ওপেনিংয়ের পর তৃতীয় টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে আরও ১০টি বিমান পার্ক করা যাবে।তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে। ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা, তবে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন ও পুরোনো টার্মিনালের মধ্যে করিডোর নির্মাণ হবে।
২০২৪ সালের শেষের দিকে তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে।‘এটি হবে একটি আধুনিক টার্মিনাল। এখানে যাত্রীরা উন্নত বিশ্বের সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে। এখানে সব কিছুতে আধুনিক অটোমেটেড সিস্টেম থাকবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।