অতনু চৌধুরী(রাজু)বাগেরহাট || বাগেরহাটে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম্য লেখাপড়া।
এখন আর সন্ধ্যার পর এক জনের পড়া শুনে আরেকজন পাল্লা দিয়ে এখন আর বই পড়ে না। কোন মা-বাবা তার সন্তানকেও বলে না যে অমুক পড়তেছে তুই বসে আছিস। অথচ ৮/১০ বছর আগেও সন্ধ্যার পর চারপাশ থেকে বিভিন্ন স্বর ভঙ্গিতে বই পড়ার আওয়াজ শোনা যেত। পরীক্ষা কাছাকাছি থাকলে তো কথাই নেই। কোন সহপাঠী বন্ধু দিনে ও রাতে কতক্ষণ পড়ালেখা করে গোপনে খোঁজ নিয়ে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা হতো। সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটিও রাত-দিন পড়তো। যে কোন বোর্ড পরীক্ষার আগে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ার চর্চাটাও আর নেই। এ চর্চাটার জন্যই অ্যালার্ম ঘড়ির আলাদা একটা কদর ছিল।
বোর্ড পরীক্ষার আগে আল-ফাতাহ, পাঞ্জেরী, পপি গাইড, শিওর সাকসেস, টপ ব্রিলিয়ান্ট সাজেশন্সেরও খুব কদর ছিল। গত বছর পাশ করা ভাই বোনদের কাছে সাজেশনস নিয়ে চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ চলতো।
মাত্র ৮/১০ বছরের ব্যবধানে সবই প্রায় বিলীন হয়ে গেল। সন্ধ্যার পর ছাত্র-ছাত্রীদের বাজারে তো দূরের কথা ঘরের বাইরে দেখলেই সবাই অবাক হতো, শাসন করতো।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,এখন ছাত্র – ছাত্রীরা অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেরা বাজারে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কিছু বলছে না। সন্ধ্যার পর এখন দল বেঁধে নামধারী ছাত্র – ছাত্রীরা মোবাইলে ব্যস্ত থাকে। কোথাও কোন পড়ার শব্দ নেই। গ্রুপ চ্যাটিং, অনলাইন/অফলাইন গেমস, পাব্জি ফ্রী ফায়ার, অনলাইন জুয়া, টিকটক, চুলের বিভিন্ন স্টাইল কার্টিং করে পাড়া-মহল্লায় ও বাজারে আড্ডাবাজি, গ্রুপিং করা, শিক্ষা গুরুর সাথে বেয়াদবী, শিক্ষকের নামে মিথ্যাচার করা, নিয়ম ভাঙ্গা, বেয়াদবী এগুলোই এখন তাদের পছন্দের তালিকা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক স্কুল ছাত্রের পিতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে আগে প্রতিনিয়ত স্কুলে যেতো তবে এখন ঠিক মতো স্কুলে যায় না। আর আমি কিছু বললে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেয়। তাই সকল পিতা মাতার কাছে অনুরোধ করি যে তাদের ছেলে মেয়ে প্রতিনিয়ত কি করছে তাদের খোঁজ খবর’সহ তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
এ বিষয়ে মোংলা শিশু বিদ্যা নিকেতনের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু বকর সিদ্দিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক জন শিক্ষক মানেই শ্রদ্ধার পাত্র, গুরুজন, অভিভাবক। মানুষ গড়ার কারিগর। বড় কথা তিনি একজন আদর্শবান মানুষ। বাবা-মা সন্তান জন্ম দিতে পারেন। কিন্তু ছেলেমেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলেন একজন শিক্ষক। বাবা-মায়ের চেয়ে শিক্ষকের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম,তখন একজন শিক্ষকের প্রতি আমাদের এতই শ্রদ্ধাবোধ ছিল যে, কোনো শিক্ষককে যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসতে দেখতাম, তাহলে আমরা অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসতাম। তবে এখন আর আমাদের চোখে পড়ে না। তাই সকল ছাত্র ছাত্রীদের পিতা মাতার প্রতি অনুরোধ রইল তাদের খোঁজ খবর নিতে বা তাদের শু শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রতি খেলা রাখতে।