মোঃ আলমগীর হোসেন, নড়াইল প্রতিনিধি ||নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় মাত্র ১ সপ্তাহের ব্যবধানে দু’জন কৃষক ও একজন যুবদল কর্মী নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। এদিকে
লোহাগড়া থানার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ঘটনায় থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমানকে লোহাগড়া থানা থেকে নড়াগাতী থানায় এবং নড়াগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলামকে লোহাগড়া থানায় বদলী করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে লোহাগড়া থানার ওসি হিসেবে শরিফুল ইসলাম যোগদান করেছেন।
লোহাগড়া পৌরসভাসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন জুড়ে খুন,ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা, অবৈধ বালুর ব্যবসাসহ নানাবিধ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অব্যাহত অপরাধ সংঘটনের ঘটনায় এলাকার জনমনে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
ভয়, আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায় জড়োসড়ো হয়ে পড়েছে মানুষজন। আতঙ্কিত মানুষেরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গৃহীত তৎপরতায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না। গেল ১ সপ্তাহের ব্যবধানে লোহাগড়ায় দু’জন কৃষক ও একজন যুবদল কর্মী খুনের ঘটনায় আতংকিত সাধারণ মানুষজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার করফা গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৭ মে বুধবার সন্ধ্যার পরে রাস্তা দিয়ে ভ্যান চলাচলকে কেন্দ্র করে চাচাতো ভাই ও ভাতিজারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টোকন মীর (৬০) নামের একজন কৃষককে গুরুতর আহত করে। ৮ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় টোকন মীর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহত টোকন মীর লোহাগড়া উপজেলার করফা গ্রামের মৃত নবাব মীরের ছেলে এবং পেশায় তিনি একজন কৃষক। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় নড়াইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে মাদারীপুর জেলা থেকে হত্যা মামলার অন্যতম
এজাহারভুক্ত আসামি রাজ্জাক মীরকে (৬৪) আটক করেছে।
কৃষক টোকন মীর হত্যার একদিন পর ৯ মে সকালে লোহাগড়ার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের কাউলিডাঙ্গা বিল থেকে সালমান খন্দকার (৩৭) নামে একজন যুবদল কর্মীর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সালমান খন্দকার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের শামুকখোলা গ্রামের খাজা খন্দকারের ছেলে এবং তিনি বালু ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। যুবদল কর্মী হত্যার প্রতিবাদে স্হানীয় বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুবদল কর্মী সালমানের হত্যার ঘটনার একদিন পর নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলার দায়ের করেছেন।
এ ঘটনায় পুলিশ মশিয়ার রহমান নামে একজন এজারভুক্ত আসামিকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
গত ১৪ মে বুধবার সকালে লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের কুমারডাঙ্গা বাজারে পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে খাজা মোল্যাকে (৪৫) নৃশংসভাবে খুন করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ লোকজন ১০/১২টি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় এবং ৩টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বৃহস্পতিবার রাতে নিহত খাজা মোল্যার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও থানায় মামলা হয় নাই, তবে পুলিশ সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
লোহাগড়ার অবনতিশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে
সিনিয়র সাংবাদিক আকরামুজ্জামান মিলু বলেন, আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ ‘পুলিশের মনোবল’ ভেঙ্গে পড়া। সামাজিক অবক্ষয় রোধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে পুলিশের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন ভাবে এগিয়ে আসতে হবে’।
আইন-শৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে নড়াইল জেলা পুলিশের উদ্ধতন কর্মকর্তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) বদলির বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল হক বলেন, রুটিন কাজের অংশ হিসেবে ওসিকে রদবদল করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Copyright © 2022 KhulnarKhobor.com মেইল:khulnarkhobor24@gmail.com।জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা আইনে তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন আবেদিত।স্মারক নম্বর:- ০৫.৪৪.৪৭০০.০২২.১৮.২৪২.২২-১২১।এই নিউজ পোর্টালের কোন লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।